শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন

শিরোনাম:
ব্রেকিং নিউজ:

কুমিল্লা জেলার প্রতিটি থানায় সংবাদদাতা নিয়োগ দিচ্ছে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘কুমিল্লার কথা’। আপনি যদি সাংবাদিকতায় আগ্রহী হন, সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চান, তাহলে এ সুযোগ আপনার জন্য। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন 'কুমিল্লার কথা' অফিসে বা নিন্মে দেয়া মোবাইল নাম্বারে।

পরীক্ষা বর্জন করে দাবিদাওয়ার নামে শিশুদের জিম্মি করা কি শিক্ষকতার দায়িত্ব?

মো. ইব্রাহীম খলিল মোল্লা
Update Time : শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন

আজ ২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার এই দিনটি দেশের লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর জন্য ছিল বার্ষিক পরীক্ষার সূচি। কিন্তু তারা কেউই জানত না, তাদের ভবিষ্যতের দরজায় দাঁড়ানো শিক্ষকই সেই দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেবেন। শিক্ষকরা বেতন–ভাতা ও গ্রেড বৃদ্ধির দাবিতে আজ পরীক্ষা বর্জন করেছেন। দাবি থাকতেই পারে, কিন্তু পদ্ধতি কি এমন হওয়া উচিত?

একটি বিষয় স্পষ্ট, শিক্ষকদের আন্দোলন আজ প্রশ্নের মুখে। কারণ এই আন্দোলনের প্রথম চাপ এসে পড়েছে সবচেয়ে দুর্বল, সবচেয়ে নিরীহ জায়গায়, অর্থাৎ শিশুদের ওপর। যারা জীবনে প্রথমবার পরীক্ষার স্বাদ নিতে শেখে, সেই শিশুরাই আজ তাদের শিক্ষকদের স্বার্থরক্ষার বলি হলো। শিক্ষক সমাজ এ কাজকে কী যুক্তিতে ন্যায্যতা দেবে?

এখন প্রশ্ন হলো নিজেদের দাবিদাওয়া তুলতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়াটা কি নৈতিকতার মধ্যে পড়ে? পেশার শপথ কোথায় গেল? শিক্ষকতা কি শুধুই সরকারি চাকরি, নাকি একটি দায়িত্ব, একটি নৈতিক প্রতিশ্রুতি? যারা বছরের পর বছর ‘জাতি গঠনের কারিগর’ পরিচয় দিয়ে আসছেন, তারা কি জানেন না, একটা পরীক্ষা বাতিল হওয়া মানে একটি শিশুর পূর্ণ বছরের পরিশ্রম ধুলিসাৎ হওয়া?

শিক্ষকরা দাবি করছেন যে তারা অবহেলিত। কিন্তু আজকের ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, অবহেলা কি কেবল সরকারের পক্ষ থেকে হয়, নাকি শিক্ষকদের একটি অংশও নিজেদের দায়িত্ব পালন থেকে সরে এসে সেই অবহেলার চর্চা করছেন? দাবি আদায়ের উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম আছে। আদালত আছে। প্রশাসন আছে। গণমাধ্যম আছে। তাহলে পরীক্ষার দিনকে কেন আন্দোলনের অস্ত্র বানানো হলো? এছাড়াও যাদের কাছে আমরা নিঃশঙ্ক চিত্তে সন্তানদের পাঠিয়ে দেই, তারা যদি দায়িত্বশীলতার জায়গায় ব্যর্থ হন, তাহলে অভিভাবকরা আস্থা রাখবেন কীভাবে?

সত্য কথা হলো, এই আন্দোলন শিশুদের জিম্মি করে চাপ তৈরির কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। আর এমন কৌশল কোনো উন্নত সমাজে শিক্ষকদের কাছে কাম্য নয়। শিক্ষকতার নৈতিক মানদণ্ড কেউ তাদের হাতে তুলে দেয়নি, তা তারা নিজেরাই প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু আজকের ঘটনা সেই মানদণ্ডে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন টানছে।

সরকারের দায়িত্ব এ দাবি শুনতে হবে এটা ঠিক। কিন্তু শিক্ষকদেরও দায়িত্ব শিশুদের ভবিষ্যৎকে নিজেদের দরকষাকষির হাতিয়ার বানানো নয়। শিক্ষার সঙ্গে খেলা করলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের। আর শিক্ষক যদি সেই খেলায় অংশ নেন, তবে সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় সংকট দাঁড়ায়।ভেবে দেখুন আমরা কাদের হাতে ভবিষ্যৎ তুলে দিচ্ছি?