শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:২২ অপরাহ্ন

শিরোনাম:
ব্রেকিং নিউজ:

কুমিল্লা জেলার প্রতিটি থানায় সংবাদদাতা নিয়োগ দিচ্ছে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘কুমিল্লার কথা’। আপনি যদি সাংবাদিকতায় আগ্রহী হন, সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চান, তাহলে এ সুযোগ আপনার জন্য। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন 'কুমিল্লার কথা' অফিসে বা নিন্মে দেয়া মোবাইল নাম্বারে।

ডুমুরিয়ার বিল শিংগার পানির নীচে, হাজার হাজার বিঘায় সবজি ওমাছ চাষীদের মাথায় হাত।

শেখ মাহতাব হোসেন
Update Time : শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:২২ অপরাহ্ন

শেখ মাহতাব হোসেন ডুমুরিয়া খুলনা।

ডুমুরিয়া(খুলনা) ঘেরের অনেক মাছ, গলদা চিংড়ি,ও ঘেরের আইলে সবজি সব পানিতে ভাঁসায় নিয়ে গেছে। অনেক টাকা খরচ করিছি। এখন এই যে ক্ষতি, কিভাবে পুষাবো জানিনে? এখন আমাদের এই দুরাবস্থা! চিন্তায় ঘুমোতে পারিনে। এখন যে কি করব? বুঝে উঠতে পারতিছিনে। আমাদের প্রতিবছর এইভাবে বিল তলায় যাচ্ছে। গত বছরও আমার অনেক মাছ চলে গেছে। এই বছরও সেই একই অবস্থা। প্রত্যেকটা ঘেরের এমনই অবস্থা। সব ঘের তলায় গেছে। বাকি যেটুকু আছে, ডাঙ্গার পানি বিলে ঢুকলে সেটুকুও আর থাকবে না। বিলের পানি সরানোর কোন জায়গা নেই। যে একটা জায়গা আছে সেটা কচুরিপানা দিয়ে আটকানো। পানি সরানোর কোন ব্যবস্থা নেই। আমরা এখন খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি”।
গত তিন দিনের ভারি বর্ষণে নিজের ঘেরের লক্ষ লক্ষ টাকার গলদা চিংড়ি পানিতে ভেঁসে যাওয়ায় এভাবে নিজের সর্বনাশ এবং অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করছিলেন ডুমুরিয়া থানাধীন চহেড়া গ্রামের বিল শিংগার মাছ চাষী মোঃ রফিকুল মোড়ল। কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে তার ঘের থেকে কয়েক লক্ষ টাকার
গলদা চিংড়ি পানিতে ভেসে যাওয়ায় পাগল প্রায় মোঃরফিকুল মোড়ল।
শুধু রফিকুল মোড়ল নয়, গত ৪ দিনের ভারী বর্ষণে বিল শিংগা ,চহেড়া,টিপনা , মিকশিমিল,মৌজার সহস্রাধিক মাছ চাষীর ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেঁসে গেছে কোটি কোটি টাকার চিংড়ি এবং সাদা মাছ। ঘেরের মাছ ভেঁসে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে এ সকল মাছ চাষীরা।
রানাই গ্রামের মোঃ জিয়াউর রহমান। বিল বিল শিংগা অন্যতম বড় একজন মাছ চাষী। আমাদের ডুমুরিয়া খুলনা প্রতিনিধি শেখ মাহতাব হোসেন কে বলেন, “এক সময় এই বিল শিংগা আমাদের জন্য খুব একটা আশীর্বাদের জায়গা ছিল। এখন যে পরিস্থিতি হইছে, বিগত দুই বছর ধরে, এটা আমাদের জন্য দুঃস্বপ্ন বলেন, দুর্ভিক্ষ বলেন এইরকম একটা ব্যাপার হয়ে গেছে। আমরা এখানে যারা মাছ চাষের উপর নির্ভরশীল, আমরা সবাই পানিতে প্লাবিত। অনেক ক্ষতি হইছে। হাজার হাজার হেক্টর জমির মাছ এখন ফুটফুটে পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উন্মুক্ত বিলে মানুষ মাছ শিকার করছে আর মাছ চাষীরা কেঁদে মরতিছে। এক কথায় কান্না করছে। বিল শিংগা প্লাবিত হওয়ার ফলে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার নিজেরও তিনটা ঘের প্লাবিত হইছে। কয়েক লক্ষ টাকার মাছ ভেঁসে গেছে। এখানে সরকারি কিছু চিংড়ি মাছের প্রকল্প আছে। সেগুলোও প্লাবিত হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকারি প্রকল্পগুলোতে মাছ দিল, খাবার দিল, কিন্তু তারা পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা করল না? তিনি বলেন, এ জলাবদ্ধতার কারণ হচ্ছে বিগত দিনে যারা ক্ষমতাসীন ছিলেন, যারা ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন তারা কখনও পানি নিষ্কাশনের ব্যাপারটা মাথায় রাখিনি। কখনও তারা শিংগার বিলের দিকে তাকিয়ে দেখেনি। এখন সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি আমাদের দান খয়রাত বা যাকাত লাগবে না। আমাদের একটাই দাবি বিল ডাকাতিয়ার পানির নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক”।
বিল শিংগা মাছ চাষী তেলিগাতী গ্রামের ফারুক সরদার বলেন, “প্রতি বছর আমাদের এই ঘের বেঁড়ি তলায় যায়। ঘেরের উপর হাঁটু সমান পানি। ঘেরের পাড়ে ঝালের চারা লাগাইছিলাম এখন উঠোই নিয়ে যাচ্ছি। ঘেরের মাছ সব চলে যাচ্ছে। নেট দিছি, তাও ঠ্যাক খাচ্ছে না। নেটের উপর দিয়ে লাফায় চলে যাচ্ছে। বিলের পানি সরানোর কোন ব্যবস্থা নেই। প্রতিবছর তলায় যায়। ক্ষ্যাতখন্দ হয় না। আমরা মাছ চাষীরা হয়রানি হয়ে যাচ্ছি”।
একই এলাকার মাছ চাষী রিজাউল ইসলাম বলেন, “এক সময় বিল শিংগা আমাদের জন্য আশীর্বাদ ছিল। এখন আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াইছে। আমাদের এখান থেকে কোন উৎপাদন হচ্ছে না। প্রতিবছর তলায় যাচ্ছে। এভাবে প্রতিবছর আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। ঘের বেড়ি উঁচু করলেও থাকে না। পানি না সরার কারণে”।
উল্লেখ্য, বিল শিংগা এক সময় হাজার হাজার কৃষিজীবী এবং মৎস্য চাষীদের জন্য আশীর্বাদ ছিল। ৮০’ দশকেও বিলটিতে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে বছরে ৩টি ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে মাছ চাষ হতো। তখন কৃষিজীবী এবং মাছ চাষীদের মুখে সর্বদা হাসি লেগে থাকতো। বিল শিংগার পানি নিষ্কাশনের জন্য সুইচ গেট এবং খাল খনন করা হয়। কিন্তু কালের পরিক্রমায় পানি নিষ্কাশনের খালগুলি নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় সৃষ্টি হয় স্থায়ী জলবদ্ধতার। আশীর্বাদের সেই বিল শিংগা এখন কৃষিজীবী ও মৎস চাষীদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণের ফলে বিল শিংগা প্লাবিত হয়। প্লাবিত হয় হাজার হাজার কৃষিজীবী এবং মাছ চাষীদের স্বপ্ন। বিশেষ করে প্রতিবছর বিল শিংগার হাজার হাজার মাছ চাষী ঘেরে মাছ দিয়ে লাভের স্বপ্ন দেখে, কিন্তু পানি নিষ্কাশন না হাওয়ায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণ হলেই তাদের সে স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে যায়।

গত ৩ দিনের ভারী বর্ষণে বিল ডাকাতিয়ার তেলিগাতী মৌজার কয়েক হাজার মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল। সর্বনাশ হয়েছে মাছ চাষীদের। উদ্বিগ্ন এবং হতাশ হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মাছ চাষিরা।
এব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ দিদার হোসেন দিদার স্থানীয় ইউপি সদস্য,ওগ্রাম বাসীদের সাথে করে নিয়ে বিল শিংগার সুইস গেটের কপাট উঠিয়ে দিলো বিল শিংগার পানি সরতে শুরু করেছে বলে চেয়ারম্যান শেখ দিদার হোসেন জানিয়েছেন।
এব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবুবকর সিদ্দিকের ০১৭১১২৪১৩৬১ নাম্বার মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি তার মুঠো ফোন রিসিভ করেননি।।