বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২১ অপরাহ্ন

শিরোনাম:
বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনী জোট নিয়ে কী ভাবছে এনসিপি? মেঘনায় ২ দিনেও ডোবা লাইটার জাহাজ উদ্ধার হয়নি পুতিনের সাথে বৈঠক করে অযথা সময় নষ্ট করতে চাননা: ডনাল্ড ট্রাম্প ১৫ সেনাকর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল মেঘনায় সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে প্রতারণার অভিযোগ শ্যামনগর পার্শ্বেখালী ব্রীজ এলাকা থেকে ৪৫ কেজি হরিনের মাংস আটক করলো কোষ্টগার্ড শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা-২০২৫ অনুষ্ঠিত  শ্যামনগরে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত নিরাশ্রয় হয়ে পড়লো কয়েকশ” ভুমিহীন পরিবার শ্যামনগর পৌরসভা বাতিলের দাবিতে গণসমাবেশ শ্যামনগরে নানা  আয়োজনে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ পালিত হয়েছে 
ব্রেকিং নিউজ:

কুমিল্লা জেলার প্রতিটি থানায় সংবাদদাতা নিয়োগ দিচ্ছে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘কুমিল্লার কথা’। আপনি যদি সাংবাদিকতায় আগ্রহী হন, সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চান, তাহলে এ সুযোগ আপনার জন্য। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন 'কুমিল্লার কথা' অফিসে বা নিন্মে দেয়া মোবাইল নাম্বারে।

জেব্রা ফিস কেন ইঁদুরের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে গবেষণাগারে

Reporter Name
Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২১ অপরাহ্ন

নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য ইঁদুর বা বানরের ব্যবহারের চল বহুদিনের। জীববিজ্ঞান নিয়ে যারাই পড়াশোনা করেন, তাদের ইঁদুর নিয়ে কাটাছেঁড়া করতেই হয় গবেষণাগারে।গিনিপিগ বা কখনও বানরের ওপরেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হয় গবেষণার খাতিরে।কিন্তু সেই ধারণাটা পাল্টে যেতে চলেছে। বৈজ্ঞানিকরা এখন ইঁদুরের পরিবর্তে এক ধরনের মাছ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য জেব্রা ফিস বা বাংলায় যেটি অঞ্জু মাছ বলে পরিচিত, তা ব্যবহার করতে শুরু করেছেন বৈজ্ঞানিকরা।এই মাছ গোটা উপমহাদেশেই সহজলভ্য। তবে এছাড়াও রয়েছে তার আরও অনেক গুণাগুণ, যার মধ্যে একটি হল, তাদের অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গই মানুষের মতো। সেজন্য কোন রোগীকে ঠিক কোন ওষুধ দেওয়া যেতে পারে, তা চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা জেব্রা ফিসের ওপরে গবেষণা করে সহজেই জেনে নিতে পারছেন।পরীক্ষার মাধ্যম হিসাবে কেন ইঁদুর বা বানরের তুলনায় জেব্রা ফিস বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য সুবিধাজনক, জানতে চেয়েছিলাম ভারতের সেন্টার ফর সেলুলার এন্ড মলিকিউলার বায়োলজির পরিচালক রাকেশ মিশ্রর কাছে।

মি. মিশ্র বলছিলেন, “প্রথমত, ইঁদুরের ওপরে পরীক্ষা চালানোর জন্য যে বিরাট আয়োজন, অনেক জায়গা বা বিপুল খরচ করতে হয়, জেব্রা ফিসকে পরীক্ষার জন্য তৈরি করতে তার এক শতাংশও খরচ করতে হয় না।”

“খুব সহজেই প্রচুর সংখ্যায় জেব্রা ফিস রাখা যায় গবেষণাগারে। দ্বিতীয়ত, ইঁদুর ছাড়া বানরজাতীয় প্রাণীর ওপরে পরীক্ষা চালাতে গেলে অনেক নিয়মকানুন মানতে হয়, এথিকসের কারণে। নিতে হয় ছাড়পত্র। জেব্রা ফিসের ক্ষেত্রে সেসব প্রয়োজন হয় না। এজন্যই পরীক্ষাগারে জেব্রা ফিসের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে,” বলেন তিনি।

ভারতেই এখন অন্তত ৪০টি গবেষণাগারে জেব্রা ফিস ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে তার মধ্যে ৩-৪টি কেন্দ্রে অত্যাধুনিক পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে।জেব্রা ফিসকে কাজে লাগিয়ে জীববিজ্ঞান গবেষণা তো চলছেই, তার সঙ্গে মানুষের দেহে কোন রোগে কী ধরনের ওষুধ দেওয়া যেতে পারে, সেটার পরীক্ষাও খুব তাড়াতাড়ি করা সম্ভব হচ্ছে।এমনিতেই মাছ হল মেরুদণ্ডী প্রাণী। তাই বিবর্তনের সময়কাল অনুযায়ী সেটি মানুষের কিছুটা কাছে।

তাছাড়া মাছের অনেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গই মানুষের শরীরের সঙ্গে মেলে – যেমন এদের দেহে হাড় রয়েছে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা মানবশরীরের মতো, যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড প্রভৃতি রয়েছে। যদিও শ্বাসযন্ত্র নেই।”তবে এসবের থেকেও জেব্রা ফিসের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হল তাদের ভ্রূণটা শরীরের বাইরে বিকশিত হয়। তাই বাইরে থেকেই লক্ষ্য রাখা যায় গোটা প্রক্রিয়াটি,” জানাচ্ছিলেন রাকেশ মিশ্র। তিনি বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় জেব্রা ফিস অতি দ্রুত কাজে দেয়।

সিসিএমবির পরিচালক রাকেশ মিশ্রর কথায়, “ধরুন কোনও রোগীর দেহে একটা টিউমার পাওয়া গেল। সেখান থেকে কোষ সংগ্রহ করে একসঙ্গে অনেকগুলি জেব্রা ফিসের শরীরে প্রবেশ করানোর তিন থেকে চারদিনের মধ্যেই ওই মাছের শরীরেও টিউমার তৈরি হয়ে যাবে। তার পরেই টিউমারসহ মাছগুলির শরীরে নানা ধরণের ওষুধ প্রয়োগ করে দেখে নেওয়া যায় যে ঠিক কোন ওষুধটি ওই বিশেষ টিউমার সাড়াতে সবথেকে উপযুক্ত।”

তিনি বলেন, “এছাড়া ক্যান্সারের চিকিৎসাতেও জেব্রা ফিস ব্যবহার করা হচ্ছে। এর কারণ হলো একেকটি ক্যান্সার জিনগতভাবে একেক ধরনের। তাই একই ওষুধ নানা জনের ওপরে প্রয়োগ করা হলে সঠিক ফল নাও দিতে পারে।”

“এক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে ক্যান্সারের ধরনটি চিহ্নিত করে সঠিক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে। আর গোটা পরীক্ষার ফল পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষাও করতে হবে না। দিন সাতেকের মধ্যেই জানা যাবে যে কোন ওষুধ কী পরিমাণে রোগীকে দেওয়া উচিত,” বলছিলেন রাকেশ মিশ্র।

হায়দ্রাবাদ শহরের সেন্টার ফর সেলুলার এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি বা সিসিএমবি কোষ এবং আণবিক জীববিজ্ঞান গবেষণার প্রধান কেন্দ্র। এই সপ্তাহে সেখানে হাজির হয়েছিলেন এমন অনেক জীববিজ্ঞানী, যারা জেব্রা ফিসের ওপরে নানা গবেষণা চালাচ্ছেন।

এর মধ্যে একটি গবেষণাপত্র অনেকের নজর কেড়েছে, যা হল এই জেব্রা ফিস কী সংখ্যা গণনা করতে পারে?
ওই গবেষণাপত্র যিনি লিখেছেন, সেই কাভেরী রাজারামন ইন্দিরা, বিবিসিকে বলছিলেন, “জেব্রা ফিস যে পরিমানগতভাবে আলাদা বস্তু পৃথকভাবে চিনতে পারে, তা প্রমাণিত। আমি যে গবেষণাটা করছি, তাতে খোঁজার চেষ্টা করছি যে জেব্রা ফিস আসলে কত অবধি গুনতে পারে।”

“এটা দেখেছি যে এক দুই আর তিনের মধ্যে তারা ফারাক করতে পারছে। তবে তা সত্যিই গণনা করার ক্ষমতা না কি অন্য কোনও প্রক্রিয়ায় মাছটি বিভিন্ন পরিমাণ খাদ্যের মধ্যে ফারাক করছে, তা এখনও প্রমাণিত হওয়ার অপেক্ষায়,” বলেন তিনি।